29.3 C
Kolkata
Monday, June 16, 2025
বিশ্ব বাংলা নিউজজেলাএক বাচ্চাকে তুলে নিয়ে গেল চিতাবাঘ

এক বাচ্চাকে তুলে নিয়ে গেল চিতাবাঘ

খাদিমুল ইসলাম, বানারহাট ” চা বাগানে শাক-পাতা তুলতে যাওয়া এক বাচ্চাকে বন্ধুদের সামনে থেকেই তুলে নিয়ে গেল চিতাবাঘ। কিছুক্ষণ পর চা বাগানের ভেতর আধ-খাওয়া অবস্থায় মিলল বাচ্চাটির দেহ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকেলে জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট ব্লকের তোতাপাড়া চা বাগানে।
জানা গিয়েছে তোতাপাড়া চা বাগানের গুদাম লাইনের বাসিন্দা দিলীপ মাহালীর আট বছর বয়সী ছেলে দিলজিৎ মাহালী এদিন বিকেলে তার চার বন্ধুর সাথে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল। বাড়ির কাছেই চা বাগানের ৬ নম্বর সেকশানে তারা ঢেঁকিশাক সহ কিছু জংলি শাক সংগ্রহ করছিল। এই শাক বাড়ি নিয়ে গেলে রাতে তাই দিয়েই তাদের খাওয়া হবে, বাড়ির অভিভাবকেরাও খুশি হবে। এমন কাজ তারা নিয়মিতই করে। শুক্রবার সূর্য তখন অস্তগামী, শাক সংগ্রহও তাদের প্রায় শেষ, সেই মুহুর্তে হঠাৎই চা বাগানের মাঝখান থেকে একটি চিতাবাঘ বেড়িয়ে দিলজিৎ এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে মুখে করে তুলে চা বাগানের ভিতর লুকিয়ে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় তার তিন সমবয়সী বন্ধু আত্মরক্ষার জন্য আর্তনাদও করে উঠার সময়টুকুও পায় নাই। তারা আতঙ্কে ছুটে গ্রামে ফিরে এসে সকলকে ঘটনাটি জানায়। এর পর স্থানীয় বাসিন্দারা চা বাগানে শিশুটির খোঁজ শুরু করেন। প্রায় আধঘন্টা খোঁজার পর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে শিশুটির অর্ধভুক্ত দেহ উদ্ধার হয়। এর পরই বাগানের চা শ্রমিকেরা ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন। মানুষখেকো চিতাবাঘটিকে ধরার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী তারা জানাতে থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বানারহাট থানার আই.সি, ধূপগুড়ির এস.ডি.পিও গিয়ালসেন লেপচা সহ বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পাশাপাশি বনদপ্তরের মোরাঘাট, বিন্নাগুড়ি রেঞ্জ ও তোতাপাড়া বিটের বনকর্মীরাও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। বনদপ্তরের সূত্রে জানা গিয়েছে দেহটি উদ্ধার করা হয়েছে, মৃতের পরিবারকে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। ওই এলাকায় আগামী ক’দিন বনকর্মীরা নজরদারী চালাবেন। চিতাবাঘের হামলা থেকে বাঁচতে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে। পাশাপাশি লোকালয়ের কাছে ঘুরে বেড়ানো চিতাবাঘগুলিকে ধরতে খাঁচা পাতা হবে।
উত্তরবঙ্গের জঙ্গলগুলির পাশাপাশি বর্তমানে চা বাগানও চিতাবাঘের স্বাভাবিক বসতভূমিতে পরিনত হয়েছে। চিতাবাঘ লাজুক স্বভাবের জন্তু, তারা মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে, মানুষ চিতাবাঘের স্বাভাবিক শিকারও নয়। তবুও ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানে কাজ করার সময় চা শ্রমিকদের হামলায় আহত হওয়ার ঘটনা এবং চিতাবাঘের হামলায় মৃত্যু প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। এর বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে অজান্তে অসাবধানতাবশত চিতাবাঘের খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ার কারণে। চিতাবাঘ নিশাচর জীব, বাগানে চা শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনা ছাড়া অন্যান্য অধিকাংশ ঘটনাই তাই বিকেলের পর ঘটতে দেখা যায়। অনেক সময় বাগানে নিচু হয়ে ঝুঁকে কাজ করার সময় শিকার ভেবে ভুল করেও চিতাবাঘ মানুষের উপর আক্রমণ করে। বনদপ্তরের পক্ষ থেকে চিতাবাঘের হামলা থেকে বাঁচতে শাক-পাতা-লাকড়ি সংগ্রহের জন্য বাচ্চাদের চা বাগানে না পাঠানো, সন্ধ্যার সময় চা বাগানে ঘুরে না বেড়ানো, দলবেঁধে চলাফেরা করা, নিচু হয়ে ঝুঁকে কাজ না করা, বাগানের এক দিক থেকে লাইন দিয়ে পাতা তোলার কাজ করা, বাগানে ঢোকার আগে পটকা ফাঁটানো কিম্বা আওয়াজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই পরামর্শগুলি মানলে অধিকাংশ সময় চিতাবাঘের হামলার ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। এদিন এই শিশুগুলি চা বাগানের ভেতর নিচু হয়ে বসে শাকপাতা তুলছিল, ফলে এদের স্বাভাবিক শিকার ভেবে ভুল করেই চিতাবাঘ আক্রমণ করেছে বলে বনকর্মীরা মনে করছেন।

বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন বিশ্ব বাংলা নিউজের ওয়েবসাইট এ।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,912FollowersFollow
22,400SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles