অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া :- গঙ্গা— ভারতের প্রাণস্রোত, কোটি মানুষের জীবিকার উৎস। অথচ আজ সেই গঙ্গাই ক্রমে হারাচ্ছে তার স্বচ্ছতা। শিল্প বর্জ্য, প্লাস্টিক, পুজোর আবর্জনা ও নিত্যদিনের অসচেতনতা মিলে নদীর জলে জমছে বিষ। তার ফল পড়ছে ফসলের ক্ষেতে, প্রাণিজগতে, এমনকি মানুষের শরীরেও।বিশেষজ্ঞদের মতে, “যদি এখনই সতর্ক না হই, একদিন গঙ্গা থাকবে শুধু ইতিহাসে, বাস্তবে নয়।”এই সতর্কতার বার্তা জনমানসে পৌঁছে দিতে উলুবেড়িয়া-১ নং ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে পালিত হল ‘গঙ্গা সচেতনতা অভিযান ‘ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্বচ্ছতা হি সেবা স্পেশাল ক্যাম্পেইন ’-এ।বৃহস্পতিবার সকালে গঙ্গা তীরবর্তী কালিনগর আড়চালা থেকে র্যালির মাধ্যমে শুরু হয় কর্মসূচি। হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে স্লোগান—“গঙ্গা বাঁচাও, জীবন বাঁচাও”,“পরিষ্কার নদী, সুস্থ ভবিষ্যৎ”—এই বার্তা নিয়েই উলুবেড়িয়া-১ নং ব্লক এর কালিনগর গ্রাম মুখরিত হয়ে ওঠে সচেতনতায়।অনুষ্ঠানে ছিল আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শ্লোগান রচনা প্রতিযোগিতা এবং আবৃত্তি প্রতিযোগিতা।ছোট ছোট শিল্পীর তুলিতে ফুটে ওঠে স্বপ্নের গঙ্গা— নীল, নির্মল, প্রাণবন্ত। তাদের আঁকা ছবিগুলো যেন পরিবেশ সচেতনতার রঙিন বার্তা।অভিযানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শ্লোগান রচনা প্রতিযোগিতা। অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এছাড়াও আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় শব্দে-শব্দে পরিবেশের ডাক ছড়িয়ে দিল আবৃত্তিকাররা। এই তিনটি প্রতিযোগিতা গঙ্গাকে কেন্দ্র করেই আয়োজিত হয়েছে। বিচারকবৃন্দ বলেন,“এই প্রতিযোগিতাগুলি শুধু প্রতিভা প্রকাশের মঞ্চ নয়, বরং পরিবেশ সচেতনতার জীবন্ত পাঠশালা।”এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন —অতীন্দ্র প্রামাণিক – সভাপতি, উলুবেড়িয়া-I ব্লক,দেরাসত হোসেন – প্রধান, কালীনগর গ্রামপঞ্চায়েত,মহ. ফিরোজ – মিড-ডে মিল ডিও, উলুবেড়িয়া-I ব্লক, প্রশান্ত সাধু খাঁ – ভূমি কর্মাধ্যক্ষ, উলুবেড়িয়া-I,রাজদূত সামন্ত – পরিবেশ শিক্ষকএছাড়াও ধূলাসিমলা, কালিনগর, হিরাপুর অঞ্চলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অসংখ্য ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠান সম্বন্ধে উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের বিডিও এইচ. এম. রিয়াজুল হক বলেন,“গঙ্গা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। একে রক্ষা করা কেবল প্রশাসনের কাজ নয়, প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। আজকের এই উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে সচেতন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”অনুষ্ঠানের শেষে প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজয়ীদের হাতে স্মারক ও পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।সবশেষে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, প্রধান, মেম্বার ও গ্রামবাসী একযোগে শপথ নেন—“গঙ্গা আমাদের মা, তাঁকে পরিষ্কার রাখব, রক্ষা করব।”


