‎মহাভারতের শমী বৃক্ষ দেখতে আজও হরিরামপুর হাতিডোবা গ্রামে আসেন বহু মানুষ‎

জয়দীপ মৈত্র, দক্ষিণ দিনাজপুর: শমীবৃক্ষ, ইতিহাসের পাতায় কয়েক হাজার বছরের জীবন্ত দলিল হয়ে এখনো বেঁচে আছে। তার বৃদ্ধ তকমা পেতে হয়তো আরো কয়েকশো বছরের অপেক্ষা। মহাভারতে উল্লিখিত শমীবৃক্ষ সে, অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন যার কোটরে পাণ্ডবরা নাকি লুকিয়ে রেখেছিলেন নিজেদের অস্ত্র। সেই শতাব্দী প্রাচীন মহীরুহ আজও আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে মানুষের বিশ্বাস ও ভক্তিকে।

‎দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ব্লকের হাতিডুবা গ্রাম। এলাকার যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই জানিয়ে দেবে শমীবৃক্ষের অবস্থান। ইটের উঁচু গোলাকার বেদী ঘিরে আছে সেই শমীবৃক্ষকে। আজও সেখানে দেখানো হয় প্রদীপের আলো। আগে এই শমীবৃক্ষের পৌরাণিক গুরুত্ব বলা যাক। মহাভারতে পাণ্ডবদের দীর্ঘ বারো বছরের বনবাস শেষে তাঁরা রাজা বিরাটের রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে।
‎সেইসময় পাণ্ডবরা নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিশেষ অস্ত্রগুলো লুকিয়ে রাখে শমীবৃক্ষের কোটরে। সকলের অগোচরে। অনেকে আবার বিশ্বাস করেন হরিরামপুরের বৈরাটা গ্রাম একসময় বিরাট রাজার রাজ্য ছিল। একসময় এখানে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর বিশাল প্রাসাদ। তবে ঐতিহাসিক মর্যাদা ছাড়াও একটি বিশেষ কারণে যেন এই গাছের গুরুত্ব বেড়ে যায় কয়েক ধাপ।
‎শমীবৃক্ষের বৈজ্ঞানিক নাম Prosopis cineraria, Fabacea পরিবারের অন্তর্গত উদ্ভিদের পাতা খানিক লজ্জাবতী গাছের পাতার ন্যায়। শমীবৃক্ষ মরু অঞ্চলের উদ্ভিদ হওয়া সত্ত্বেও বরেন্দ্রভূমে এল কীভাবে সেসব রয়েছে অবশ্য ধোঁয়াশা। সবথেকে উল্লেখযোগ্যের বিষয় এই অঞ্চলে কেবল একটি মাত্রই শমীবৃক্ষের উপস্থিতি পাওয়া যায়। হিন্দুশাস্ত্র মতে ,গৃহে এই গাছের উপস্থিতি গৃহস্থের জন্য অত্যন্ত শুভ। ঔষধি গুণাগুণই হয়তো এর মূল কারণ। খোদ গণেশ ঠাকুরের নাকি একটি প্রিয় গাছ এই শমী।
‎দক্ষিণ ভারতে বিশেষত মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে এই কারণে এই গাছের বিশেষ কদর রয়েছে। তবে মহাভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী লালন করছে যে বরেন্দ্রভূমি সে আজও নিঃশব্দে বহন করে চলেছে সময়ের স্রোতস্বিনী। এই বরেন্দ্রভূমিতে ছড়িয়ে আছে মহাভারতের শমীবৃক্ষ থেকে মৌর্য্যযুগের সমসাময়িক দক্ষিণ দিনাজপুরের বাণগড়ের মতো এক একটি নিদর্শন। তবে এলাকায় যেন বরাবরই বিগত বাম সরকারের আমলে অবহেলার শিকার হয়ে এসেছে।
‎বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে প্রথম থেকেই সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে হরিরামপুরের মহাভারতের ইতিহাস বিজড়িত প্রাচীন শমী বৃক্ষকে। ইতিমধ্যেই সবুজ বৃক্ষের চারিদিক বাঁধানো হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রের উদ্যোগে শমী বৃক্ষের পাশেই তৈরি হয়েছে একটি পর্যটকদের বসার ঘর।ইতিহাসে এই জীবন্ত দলিল সময়ের করাল গ্রাসেই হারিয়ে যাতে না, ধর্মীয় ভেদাভেদের উঠে গিয়ে এলাকার হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন বর্তমানে শমী বৃক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
‎এলাকাবাসী ইতিহাসবিদ মাজিদুর রহমান বলেন”এই এলাকাতেই একটি পুকুরে বিরাট রাজার আমলে হাতি দের স্নান করানো হতো। পরবর্তীতে পুকুরের হাতি ডুবে গিয়েছিল। এলাকার নামকরণ হয়েছে হাতিডোবা।” জানা গেছে বহু দূর দূরান্ত থেকে শমী বৃক্ষ দেখতে হাতিডোবা গ্রামে মানুষজনদের সমাগম হয় প্রত্যহ। ইতিমধ্যেই দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকদের আগমনের ফলে ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি ঘটেছে হরিরামপুর ব্লকের বৈরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিডোবা এলাকায়।

‎মহাভারতের শমী বৃক্ষ দেখতে আজও হরিরামপুর হাতিডোবা গ্রামে আসেন বহু মানুষ‎

জয়দীপ মৈত্র, দক্ষিণ দিনাজপুর: শমীবৃক্ষ, ইতিহাসের পাতায় কয়েক হাজার বছরের জীবন্ত দলিল হয়ে এখনো বেঁচে আছে। তার বৃদ্ধ তকমা পেতে হয়তো আরো কয়েকশো বছরের অপেক্ষা। মহাভারতে উল্লিখিত শমীবৃক্ষ সে, অজ্ঞাতবাসে থাকাকালীন যার কোটরে পাণ্ডবরা নাকি লুকিয়ে রেখেছিলেন নিজেদের অস্ত্র। সেই শতাব্দী প্রাচীন মহীরুহ আজও আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে মানুষের বিশ্বাস ও ভক্তিকে।

‎দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ব্লকের হাতিডুবা গ্রাম। এলাকার যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই জানিয়ে দেবে শমীবৃক্ষের অবস্থান। ইটের উঁচু গোলাকার বেদী ঘিরে আছে সেই শমীবৃক্ষকে। আজও সেখানে দেখানো হয় প্রদীপের আলো। আগে এই শমীবৃক্ষের পৌরাণিক গুরুত্ব বলা যাক। মহাভারতে পাণ্ডবদের দীর্ঘ বারো বছরের বনবাস শেষে তাঁরা রাজা বিরাটের রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে।
‎সেইসময় পাণ্ডবরা নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিশেষ অস্ত্রগুলো লুকিয়ে রাখে শমীবৃক্ষের কোটরে। সকলের অগোচরে। অনেকে আবার বিশ্বাস করেন হরিরামপুরের বৈরাটা গ্রাম একসময় বিরাট রাজার রাজ্য ছিল। একসময় এখানে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর বিশাল প্রাসাদ। তবে ঐতিহাসিক মর্যাদা ছাড়াও একটি বিশেষ কারণে যেন এই গাছের গুরুত্ব বেড়ে যায় কয়েক ধাপ।
‎শমীবৃক্ষের বৈজ্ঞানিক নাম Prosopis cineraria, Fabacea পরিবারের অন্তর্গত উদ্ভিদের পাতা খানিক লজ্জাবতী গাছের পাতার ন্যায়। শমীবৃক্ষ মরু অঞ্চলের উদ্ভিদ হওয়া সত্ত্বেও বরেন্দ্রভূমে এল কীভাবে সেসব রয়েছে অবশ্য ধোঁয়াশা। সবথেকে উল্লেখযোগ্যের বিষয় এই অঞ্চলে কেবল একটি মাত্রই শমীবৃক্ষের উপস্থিতি পাওয়া যায়। হিন্দুশাস্ত্র মতে ,গৃহে এই গাছের উপস্থিতি গৃহস্থের জন্য অত্যন্ত শুভ। ঔষধি গুণাগুণই হয়তো এর মূল কারণ। খোদ গণেশ ঠাকুরের নাকি একটি প্রিয় গাছ এই শমী।
‎দক্ষিণ ভারতে বিশেষত মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকে এই কারণে এই গাছের বিশেষ কদর রয়েছে। তবে মহাভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী লালন করছে যে বরেন্দ্রভূমি সে আজও নিঃশব্দে বহন করে চলেছে সময়ের স্রোতস্বিনী। এই বরেন্দ্রভূমিতে ছড়িয়ে আছে মহাভারতের শমীবৃক্ষ থেকে মৌর্য্যযুগের সমসাময়িক দক্ষিণ দিনাজপুরের বাণগড়ের মতো এক একটি নিদর্শন। তবে এলাকায় যেন বরাবরই বিগত বাম সরকারের আমলে অবহেলার শিকার হয়ে এসেছে।
‎বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে প্রথম থেকেই সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে হরিরামপুরের মহাভারতের ইতিহাস বিজড়িত প্রাচীন শমী বৃক্ষকে। ইতিমধ্যেই সবুজ বৃক্ষের চারিদিক বাঁধানো হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রের উদ্যোগে শমী বৃক্ষের পাশেই তৈরি হয়েছে একটি পর্যটকদের বসার ঘর।ইতিহাসে এই জীবন্ত দলিল সময়ের করাল গ্রাসেই হারিয়ে যাতে না, ধর্মীয় ভেদাভেদের উঠে গিয়ে এলাকার হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন বর্তমানে শমী বৃক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
‎এলাকাবাসী ইতিহাসবিদ মাজিদুর রহমান বলেন”এই এলাকাতেই একটি পুকুরে বিরাট রাজার আমলে হাতি দের স্নান করানো হতো। পরবর্তীতে পুকুরের হাতি ডুবে গিয়েছিল। এলাকার নামকরণ হয়েছে হাতিডোবা।” জানা গেছে বহু দূর দূরান্ত থেকে শমী বৃক্ষ দেখতে হাতিডোবা গ্রামে মানুষজনদের সমাগম হয় প্রত্যহ। ইতিমধ্যেই দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকদের আগমনের ফলে ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি ঘটেছে হরিরামপুর ব্লকের বৈরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিডোবা এলাকায়।