ঈশানী মল্লিক কলকাতা: কালীপুজো কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়; এটি তন্ত্রসাধনার এক অনন্য প্রতিফলন, যেখানে দেবী কালী হয়ে ওঠেন পরম শক্তির প্রতীক, আর তন্ত্র দেখায় সেই শক্তির সঙ্গে আত্মার সংযোগের পথ। জানাচ্ছেন কামাক্ষা সাধক রানা শাস্ত্রী।
কালীপুজো ও তন্ত্র—এই দুই শব্দের মধ্যে এক অদ্ভুত, গভীর ও রহস্যময় সম্পর্ক রয়েছে। কালী শুধুমাত্র এক দেবী নন; তিনি শক্তির, সময়ের, বিনাশের এবং পুনর্জন্মের প্রতীক। অপরদিকে, তন্ত্র হলো সেই আধ্যাত্মিক সাধনার পথ, যার মাধ্যমে সাধক দেবীর সঙ্গে আত্মিক সংযোগ স্থাপন করেন। বাংলার আকাশে যখন কার্তিক অমাবস্যার অন্ধকার নেমে আসে, তখনই জেগে ওঠে কোটি মানুষের ভক্তি, আনন্দ আর আলোয় ভরা কালীপুজোর উৎসব। কিন্তু এই পুজোর পেছনে যে গভীর তাত্ত্বিক দর্শন ও সাধনার রহস্য লুকিয়ে আছে, তা অনেকেরই অজানা। কালীপুজো কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়; এটি তন্ত্রসাধনার এক অনন্য প্রতিফলন, যেখানে দেবী কালী হয়ে ওঠেন পরম শক্তির প্রতীক, আর তন্ত্র দেখায় সেই শক্তির সঙ্গে আত্মার সংযোগের পথ।
এই নিবন্ধে আমরা কালীপুজো ও তন্ত্রের সম্পর্ক, ঐতিহ্য, দার্শনিক ব্যাখ্যা এবং আধুনিক প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য বিশদে আলোচনা করব।
১. কালীপুজোর তাৎপর্য
কালীপুজো মূলত শক্তিপূজার এক অনন্য রূপ, যেখানে মা কালী রূপে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রক শক্তির আরাধনা করা হয়।
কালী শব্দটি এসেছে “কাল” বা “সময়” শব্দ থেকে। তিনি সময়েরও অতীত, যিনি সৃষ্টি, পালন ও সংহারের চক্র নিয়ন্ত্রণ করেন।
তিনি মা দুর্গার উগ্রতম রূপ, যিনি অসুরনাশিনী, কিন্তু একই সঙ্গে ভক্তদের পরম মমতাময়ী জননী।
কালীপুজো সাধারণত অমাবস্যা তিথিতে (বিশেষত কার্তিক মাসের অমাবস্যায়) পালন করা হয়, যা প্রতীকীভাবে অন্ধকারে আলো খোঁজার সাধনা।
কালী : সময়, মৃত্যু ও মুক্তির দেবী। ‘কালী’ শব্দটি এসেছে ‘কাল’ থেকে—যার অর্থ সময়। সময়েরও অতীত, যিনি সমস্ত সৃষ্টি ও সংহারের নিয়ন্ত্রক, তিনিই মা কালী। তাঁর গা কালো, কারণ তিনি অন্ধকারের মধ্যেও আলো, অজ্ঞানতার মধ্যেও জ্ঞানের প্রতীক। গলায় খুলের মালা, হাতে খড়্গ — এসব বাহ্যিক রূপের মধ্যে নিহিত আছে এক গভীর দার্শনিক তাৎপর্য। কালী শেখান, ধ্বংসের মধ্য দিয়েই সৃষ্টি নবরূপে ফিরে আসে।
২. তন্ত্রের মূল ধারণা
তন্ত্র : আত্মজাগরণের বিজ্ঞান
তন্ত্র কোনো কুসংস্কার নয়, এটি এক প্রাচীন আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান। তন্ত্র বলে—
“এই জগৎকে ত্যাগ নয়, উপলব্ধি করাই মুক্তির পথ।”
তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে সাধক ব্রহ্ম ও শক্তির ঐক্য উপলব্ধি করতে চান। তাঁর বিশ্বাস, ব্রহ্ম যদি নিস্তব্ধ চেতনা হন, তবে শক্তি (অর্থাৎ দেবী) সেই চেতনার গতিশীল প্রকাশ। এই শক্তির সাধনাই তন্ত্রের সার।
তন্ত্র শব্দের অর্থ “ব্যবস্থা” বা “প্রণালী”। এটি এক প্রাচীন আধ্যাত্মিক শাস্ত্র, যার উদ্দেশ্য হলো—
“জগৎ ও জীবনের মধ্যেই পরম সত্যকে উপলব্ধি করা।”
তন্ত্র মতে, ব্রহ্ম ও শক্তি এক ও অভিন্ন। শক্তি ছাড়া ব্রহ্ম নিষ্ক্রিয়, তাই শক্তির উপাসনা মানেই সৃষ্টির শক্তিকে সম্মান জানানো।
৩. কালী ও তন্ত্র : সাধনার অবিচ্ছেদ্য যুগল
কালীপুজো মূলত তান্ত্রিক প্রথার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তান্ত্রিক কালীসাধনায় রাত্রি, নীরবতা ও মনঃসংযমের বিশেষ ভূমিকা আছে। অমাবস্যার গভীর অন্ধকারে যখন বাহ্য জগৎ স্তব্ধ, তখন সাধক নিজের অন্তর্জগতে প্রবেশ করেন। মন্ত্র, যন্ত্র ও ধ্যানের মাধ্যমে তিনি দেবীকালীর সঙ্গে আত্মিক সংযোগ স্থাপন করেন।
তন্ত্রের ‘পঞ্চমকার সাধনা’ (মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা, মৈথুন) আসলে বাহ্য অর্থে নয়, প্রতীকীভাবে মানসিক ও ইন্দ্রিয়নিয়ন্ত্রণের প্রতীক। এটি শেখায়, জীবনের সব শক্তিকে সঠিক পথে ব্যবহার করলেই চেতনা শুদ্ধ হয়, এবং তখনই দেবীকে উপলব্ধি করা যায়।
কালী উপাসনা মূলত তান্ত্রিক পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল।
তন্ত্রে কালীকে বলা হয়—
“মহাশক্তি”, “মহাকালিকা”, “আদ্যাশক্তি”, যিনি সময় ও মৃত্যুকে অতিক্রম করেন।
তান্ত্রিক সাধনার লক্ষ্য কেবল বাহ্যিক পূজা নয়, বরং অন্তর্দর্শন ও আত্মজাগরণ। সাধক বিশ্বাস করেন, মা কালী তাঁর নিজের অন্তর্গত চেতনারই প্রকাশ, যাকে উপলব্ধি করতে হলে ভয়, মোহ, লালসা ও মায়াকে জয় করতে হয়।
৪. তান্ত্রিক কালীপুজোর রীতি
তান্ত্রিক কালীপুজো সাধারণ দেবী পূজার থেকে আলাদা। এতে কিছু গোপনীয় আচার অনুসরণ করা হয়, যেমন—
রাত্রিকালীন পূজা (অমাবস্যায়)
পঞ্চমকার সাধনা — মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা ও মৈথুন (এগুলি সবসময় আক্ষরিক নয়, বহু ক্ষেত্রে প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়)
যন্ত্র ও মন্ত্রসাধনা — কালীযন্ত্র ও কালীমন্ত্রের মাধ্যমে দেবীকে আহ্বান
ধ্যান ও কল্পনা — সাধক ধ্যানের মাধ্যমে নিজেকে দেবীর রূপে অনুভব করেন
অহং লয় সাধনা — ‘আমি’ বোধের বিলোপ ঘটিয়ে ‘মা’-এর সঙ্গে ঐক্য লাভ
৫. দার্শনিক দৃষ্টিকোণ
তন্ত্র ও কালী উপাসনা দর্শনে বলে—
“ভয়কে জয় করো, তবেই তুমি মুক্তি পাবে।”
কালী যে ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দেন, তা আসলে মানুষের মনের অন্ধকার ও অজ্ঞানতার প্রতীক। তন্ত্র শেখায়, ভয়কে অস্বীকার নয়, বরং তাকে স্বীকার করে তার মধ্য দিয়ে মুক্তির পথ খুঁজে নেওয়া।
৬. সমাজ ও সংস্কৃতিতে কালীপুজো
বাংলা সমাজে কালীপুজো একদিকে যেমন ধর্মীয় উৎসব, তেমনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।
রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য, রামকৃষ্ণ পরমহংস প্রমুখ ভক্ত কবি ও সাধক কালীভক্তির মাধুর্য ছড়িয়ে দিয়েছেন।
আজও বাংলার ঘরে ঘরে কালীপুজো মানে আলো, আনন্দ ও আধ্যাত্মিকতা।
যদিও তন্ত্র একান্ত সাধনার পথ, তার মূল শিক্ষাটি হলো — শক্তিকে শ্রদ্ধা করো, নারীকে দেবী রূপে দেখো, এবং আত্মাকে বিশুদ্ধ করো।
৭. আধুনিক প্রেক্ষাপটে কালী ও তন্ত্রের গুরুত্ব
আজকের যুগে কালী ও তন্ত্র কেবল ধর্মীয় আচার নয়, বরং মানবচেতনার প্রতীক।
কালী শেখান আত্মবিশ্বাস ও নির্ভীকতা,
তন্ত্র শেখায় নিজেকে চিনে নেওয়ার বিজ্ঞান।
এই দুইয়ের মিলনে মানুষ খুঁজে পায় আত্মশক্তি, স্থিতি ও মুক্তির রাস্তা।
সুতরাং, কালীপুজো ও তন্ত্র—এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক হলো অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা। কালীপুজো ও তন্ত্রের মিলিত দর্শন আমাদের শেখায়, ধ্বংসের মধ্যেই নতুন সৃষ্টির বীজ লুকিয়ে থাকে। মা কালী হলেন সেই শক্তি, যিনি আমাদের অন্তরের অন্ধকারকে আলোকিত করেন। তন্ত্রের পথ কঠিন হলেও এর মূল শিক্ষা অত্যন্ত গভীর—
“ভয় নয়, ভক্তিই মুক্তির পথ। শক্তিই ব্রহ্ম, কালীই পরম।”
কার্তিক অমাবস্যার এই পুজো তাই শুধু দেবীর আরাধনা নয়, বরং নিজের অন্তর্গত শক্তির জাগরণেরও উৎসব।
এটি সাধকের মানসিক, আত্মিক ও নৈতিক শুদ্ধতার দাবি করে। কিন্তু যিনি সত্যিকারের ভক্তি ও আত্মসমর্পণ নিয়ে কালীসাধনা করেন, তাঁর জীবনে অজ্ঞানতা ও ভয়ের অবসান ঘটে, এবং তিনি উপলব্ধি করেন সেই চিরন্তন সত্য —“শক্তিই ব্রহ্ম, কালীই পরম।”
কিছু প্রশ্ন:
১) তন্ত্র ক্রিয়া কি শুধু কারোর ভালোর জন্যই করা হয়?
সব সময় নয়। তন্ত্র ক্রিয়ার মাধ্যমে বহু মানুষ এর ক্ষতির কাজও হয়। যেমন; মারণ বান মারা, বিচ্ছেন্দন ক্রিয়া, কারোর মধ্যে প্রেত চালনা করা, কোনো খারাপ উদ্যেশ্য সাধনের জন্য কাউকে বশীকরণ করা ইত্যাদি।
২) এই যে বলা হয়, ভগবান কারোর ক্ষতি করেন না। তাহলে কালী মায়ের সাধনা করে মানুষের ক্ষতি কীভাবে সম্ভব?
মা কালীর আরাধনা করে কখনও তন্ত্রের মাধ্যমে কারোর ক্ষতি হয় না। এটা মানুষের ভুল ধারণা যে মা কালীর উপাসনা করে তন্ত্র ক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতি করা হয়। মা জগতের মা। তিনি অন্ধকার থেকে মানুষকে আলো বা মুক্তির পথ দেখান, মুক্তির সন্ধান দেন। তিনি কোনোভাবেই তার কোনো সন্তানের ক্ষতি করতে পারেন না। এই দীপান্বিতা অমাবস্যায় মায়ের সঙ্গে ডাকিনী, যোগিনী, ভূত – প্রেত আসেন। সাধারণত, কালী পুজো করার আগে তাদের পুজো করে সন্তুষ্ট করা হয়। বছরের সব অমাবস্যার পুজোতেই আগে এনাদের সন্তুষ্ট করা হয়। তারপর মা কালীর উপাসনা হয়।
এখন যারা (অবশ্যই সবাই নন); তন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করছেন তারা এই ডাকিনী যোগিনী ভূত-প্রেত এনাদের মাধ্যমে ক্রিয়া করে মানুষের ক্ষতির কাজ করেন। মা কালী কোনোভাবেই এই খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত নন।
(৩) আমরা জানি, মানুষের ক্ষতি করলে নিজেরও ক্ষতি হয়। যে সাধকরা মানুষের ক্ষতি করছেন তাদের কি ভালো হচ্ছে?
একদমই নয়। অন্যের ক্ষতি করলে নিজের সর্বনাশ আবশ্যক। তবে তন্ত্র ক্রিয়া তো ২ টি মাধ্যমেই হয়। তাই যারা ক্ষতির কাজ করেন তারা করেন। তবে এর ফল সাধককেও ভোগ করতে হয়।
(৪) যে কোনো সাধক কি তন্ত্র ক্রিয়া করতে পারেন?
না। ভালো গুরুর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে তন্ত্র সাধনা শিখতে হয়। তার সঠিক অর্থ বুঝে চর্চা করতে হয়। তবেই সেই সাধনা করা যায়। যে উপায়ের জন্যই তন্ত্র সাধনা করা হোক না কেন সাধনায় তুষ্ট না হলে কাজ সম্পুর্ণ ও সফল হয় না।
(৫) যার ওপর তন্ত্র ক্রিয়া করে খারাপ করা হচ্ছে সে তো প্রথমে বুঝতে পারছে না। এর প্রতিকার কী?
এখন ঘোর কলি যুগ। রাক্ষসের যুগ। এই যুগে মানুষের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ, লোভ, লালসা, হিংসা, একে অপরের ক্ষতি, অন্যের সুখে অশান্তি, অন্যের ক্ষতির চিন্তা, অন্যের জিনিস হাতিয়ে নেওয়া — এই মনোভাব থাকবেই।
বহু মানুষের জীবনে আচমকা এমন অনেক ঘটনা ঘটে যার ধারনা করা তো দূর; ঘটনা ঘটার বহু বছর পরেও তা বিশ্বাসযোগ্য হয় না। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার তো হয়েই গেছে। যার কারণও সাধারণ মানুষ খুঁজে পান না।
অনেকে অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের কাছে যান। বহু টাকা খরচ করেন। কিন্তু চিকিৎসায় কোনো ফল পাওয়া যায় না।
আমার কাছে এমন অনেক মানুষ ঘটি-বাটি বিক্রি করেও চিকিৎসায় ফল না পেয়ে এসেছেন। জানতে পেরেছেন সমস্যার আসল কারণ। তারপর আমি তাদের কাজ করেছি। মানুষ উপকার পেয়েছেন।
একটি ঘটনা বলি: আমার কাছে একটি মেয়েকে নিয়ে আসা হয়েছিল। যার নিজের কাকিমা সম্পত্তির লোভে নিজের স্বামীকে মেরে ফেলেছে, মেয়েটির মা-বাবাকে মেরে ফেলেছে। মেয়েটির মধ্যে প্রেত চালান করা হয়েছিল। ঠিক মাঝ রাত হলেই মেয়েটি অদ্ভুত রকম সাজগোজ শুরু করত। বহু ডাক্তারের কাছে গিয়েও সুফল মেলেনি। আমার কাছে মেয়েটি আসার পর বুঝতে পারি আসলে তার কী সমস্যা। এই ধরনের কাজ করলে শরীরে এক ধরনের গাছ জন্মায়। সেটা তুলতে হয়। এই কাজ যিনি করেন, আমি তার কাছে মেয়েটিকে পাঠাই। তারপর তন্ত্রের মাধ্যমে মেয়েটিকে সুস্থ করি। এখন সে একদম সুস্থ, খুব ভালো আছে।
(৬) এই যে মেয়েটি সুস্থ হল বা যারা সুস্থ হয়ে যান; তাদের ওপর যে পুনরায় কোনো খারাপ ক্রিয়া করা হবে না তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর থেকে বাঁচার উপায় কী?
যে খারাপ চেয়ে সফল হতে পারবে না সে আবার চেষ্টা খারাপ করার চেষ্টা করতেই পারে। এক্ষেত্রে মা বগলামুখী রক্ষা কবচ ধারণ করানো হয়। যাতে সহজে কেউ তার আর কোনো ক্ষতি করতে না পারে। দেবী দুর্গার অষ্টম আবতার মা বগলামুখী। একমাত্র এই মা পারেন যে কোনো মানুষকে যে কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে রক্ষা করতে।
(৭) একজন সাধারণ মানুষ যিনি তন্ত্র বিষয়ে কিছুই জানেন না। তার সঙ্গেও তো যে কোনো সময় খারাপ ঘটনা ঘটতে পারে। তাহলে কী ভরসায় মানুষ বাঁচবে? কে কখন কার ক্ষতি চাইছে সেটা তো বোঝা সম্ভব নয়।
একদমই তাই। কোনো মানুষ যে কোনো জায়গায় যখন একটু উন্নতির দিকে যায় তখনই তার জীবনে শত্রুর আগমন হতে পারে। আর মনে রাখবেন, নিজের লোক ছাড়া বাইরের লোক কখনও ক্ষতি করে না। এই জন্য আমরা বলি, মানুষের নিজেদের রক্ষার স্বার্থে, ভালোর জন্য মা বগলামুখী রক্ষা কবচ ধারণ করে রাখতে। এতে যে কোনো পরিস্থিতিতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সবাই তো আর বিশ্বাস করেন না। কাউকে জোর করা যায় না এই বিষয়ে।
(৮) তাহলে তন্ত্রের মাধ্যমে কারোর খারাপ হয়ে থাকলে সেখান থেকে তন্ত্রই আবার মুক্তির পথ দেখাতে পারে?
হ্যাঁ পারে। তবে, যিনি সঠিক তন্ত্র বিদ্যা আয়ত্ব করেছেন একমাত্র তারাই পারবেন। সব বিষয়েই খারাপ – ভালো আছে। অনেকে প্রচুর টাকা খরচ করেও কোনোভাবেই বাঁচতে পারেন না। কারণ যিনি কাজ করছেন তিনি হয়তো বলছেন যে খারাপ সরিয়ে ভালো করতে পারবেন। কিন্তু যেহেতু তার সঠিক বিদ্যা নেই তাই তিনি পারছেন না ভালো করতে। এখানে একটা ব্যবসা বা প্রতারণার ফাঁদ চলে আসে।
(৯) যদি তন্ত্রের এত ক্ষমতা তাহলে কি চিকিৎসা বিজ্ঞানও সেই অর্থে পিছিয়ে?
এই বিষয়টি বিতর্কিত। তবে বিজ্ঞান গবেষণা করে। প্রমাণ করে। কিন্তু পৃথিবীর সৃষ্টি বা এই যে অম্বুবাচীর সময় মা কামাখ্যায় যে ঘটনা আজ অব্দি ঘটে আসছে; বিজ্ঞান কি পেরেছে এর সঠিক কারণ আবিষ্কার করতে? পারে নি। তাই আধ্যাত্মিকতা কে বাদ দিয়ে বিজ্ঞান একা চলতে পারে না।
(১০) শুধু কি অমাবস্যায় তন্ত্র ক্রিয়া করা যায়?
যদি কেউ কারোর ক্ষতি করার জন্য তন্ত্র ক্রিয়া করছেন তাহলে তাকে অমাবস্যার রাতে গভীর অন্ধকারে ক্রিয়া করতে হবে। কিন্তু যদি কেউ ভালোর জন্য, সৎ উদ্দেশে তন্ত্রের মাধ্যমে কোনো কাজ করতে চাইছেন; তাহলে যে কোনোদিন, যে কোনো সময় ভালো তিথি ও সময় দেখে তন্ত্রের কাজ করা যায়।