হীরক মুখোপাধ্যায় (২৩ মে ‘২০):– ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ সম্পর্কিত রোগ ‘কোভিড ১৯’-এর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রোগীদের উদ্দেশ্যে প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ রত্না চ্যাটার্জি-র প্রথম ও প্রধান সতর্কবাণী, “আপনার সাবধানতাই আপনার সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।”
আজ এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে ডাঃ রত্না চ্যাটার্জি (এম ডি) গর্ভবতী মহিলা, আসন্ন প্রসবা মহিলা ও সদ্য প্রসব করেছেন এমন মায়েদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, “এই সময় যদি বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হয়, সেক্ষেত্রে রোগীর মুখে মাস্ক বা নিদেনপক্ষে ওড়না তিন ফেরতা করে জড়িয়ে রাখাটাই শ্রেয়, এর সাথে হেড ক্যাপ, গ্লাভস পরে আসাটা বাঞ্ছনীয়। আর সব জায়গায় যেহেতু সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সুবিধা থাকেনা তাই নিজের সাথে হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার নিয়ে যাওয়াটাই ভালো।”
বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রত্না চ্যাটার্জি রোগী দেখার ফাঁকে তাঁর চেম্বারে বসে জানান, “এই সময় সংক্রমণ জনিত কারণে অনেক সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এই নিদারুণ সঙ্কটের সময় যে সকল রোগী আমার কাছে আসতে চাইছে তাঁদের আগেই বলে দেওয়া হচ্ছে, ‘রোগীর সাথে অযথা বেশি লোক আসবেননা, রোগী নিজে মোবাইল না আনলেই ভালো। এই সময় হাতে চুড়ি, বালা বা আংটি না পরাই ভালো, কেননা হাতে সাবান দিয়ে ধোয়ার সময় এগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করা না হলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়।
তবে রোগীদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার কারণে আমি রোগীদের একটা আলাদা দোপাট্টা ওই জাতীয় বস্ত্রখণ্ড আনতে বলছি, যার উপর শুয়ে রোগীরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারেন।’
সব সময় খেয়াল রাখতে হবে এক ব্যক্তির থেকে আর এক ব্যক্তির শরীরের দূরত্ব যেন অন্ততঃ পক্ষে ৪ ফুট থাকে।”
প্রসঙ্গতঃ বলে রাখা ভালো, বাইরে থেকে ঘরে ফিরে ভালো করে ২০ সেকেণ্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে সেই হাত যদি নাকে মুখে চোখে বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছোঁয়া হয়, সেক্ষেত্রে বিপদ ঘনিয়ে আসতেই পারে। এই রোগ একদিকে যেমন বায়ুতে ভর করে স্বল্প দৈর্ঘ্য অতিক্রম করতে পারে, তেমনই কোনো তলের উপর দীর্ঘসময় জীবিত থাকতে পারে তাই সাবধানতা অবলম্বনই একমাত্র শ্রেষ্ঠ উপায়।
এই রোগের জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসপ্রশ্বাসের নালীগুলোর ভেতরে ‘থ্রম্বস’ তৈরী করে ফেলে যার ফলে একটা সময় ‘কোভিড ১৯’ আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত কষ্ট শুরু হয়।
ডাঃ রত্না চ্যাটার্জি গর্ভবতী মহিলা, আসন্ন প্রসবা মহিলা ও সদ্য প্রসব করেছেন এমন মায়েদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, “লকডাউনের সময় হয়ত হাতের কাছে নানান ধরণের খাবার পাওয়া যাচ্ছে না এটা ঠিক, কিন্তু এমন অনেক খাবার এখনো পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো তুলনামূলক সস্তা অথচ পুষ্টিকর, এই সময় সেগুলো খাওয়াটাই ভালো।
এই পর্যায়ে সকালে পাতিলেবুর জল খাওয়াটা খুব ভালো, তারসাথে যদি হাতের কাছে বাতাবিলেবু পাওয়া যায় তা নেহাত মন্দ নয়।
পরে একটু ছোলা ভেজানো, আস্ত মুগডাল ভেজানো একটু গুড় দিয়ে খাওয়া যেতেই পারে।
দুপুরের আহারে ভাতের সাথে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যেকোনো একটা শাক, একটু ডাল, সবুজ সবজি, কাঁচকলা, এক টুকরো মাছ বা ডিম আদর্শ হতেই পারে।
এই ধরণের খাবার খেলে শরীর একদিকে যেমন পুষ্ট হবে তেমনই আভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেকটা চাঙ্গা থাকবে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে যতই মুখরোচক মনে হোক না কেনো ঘটিগরম, তেলেভাজা, মিষ্টি এই সময় না খাওয়াটাই ভালো। এই ধরণের খাবার খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।”
এতদিন যেসব চিকিৎসক দূর থেকে বিভিন্ন শহর ও শহরতলিতে চিকিৎসা করতে আসতেন, লকডাউনের ফলে স্বাভাবিক নিয়মে এই সময় তাঁরা তাঁদের পরিষেবা দিতে পারছেননা। ফলে অনেক রোগীই সমস্যায় পড়ছেন, অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেননা এই সময়ে বিপদে পড়লে তাঁরা কার সাথে যোগাযোগ করবেন, কোথায় চিকিৎসা হতে পারে।
তাঁদের সমস্যা নিরসনে শুধু এটুকুই বলা যেতে পারে, খুব জরুরী বিষয় হলে বেলা ১২ টা থেকে বিকেল ৩ টের মধ্যে যোগাযোগ করুন ।
যদি সমস্যা মিটে যায় তো ভালো, অন্যথায় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রত্না চ্যাটার্জি (এম ডি)-র সাথে সাক্ষাতের সময় চেয়ে চলে আসুন বারাসাত হরিতলা মোড় সংলগ্ন ‘নিরুপমা নার্সিংহোম’-এ। আশা করা যায় আপনার সমস্যা নিরসন হয়ে যাবে।