সঞ্চিতা সিনহা,বাঁকুড়া,(১৫ মে ২০২০): মানুষ কখনোই একা থাকতে পারে না। কারন মানুষ হল সমাজবদ্ধ জীব। আর পরিবারই হল মানব সমাজের মূল ভিত্তি। তাই পারিবারিক জীবন ছাড়া মানব সভ্যতা কল্পনা হীন। প্রত্যেকটি মানুষই চায় পরিবারের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বসবাস করতে। শুধুমাত্র বর্তমান কালেই নয় অতীতে ও মানুষ সংঘবদ্ধ ভাবে পারিবারিক জীবন উপভোগ করত। সেইসময় পরিবার ছিল একান্নবর্তী। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আজ পরিবারগুলি ছোট হতে হতে নিউক্লিয়ার পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
পরিবার হলো এমন একটি জায়গা যেখানে সবাই সবার সব দোষ- ত্রুটি ক্ষমা করে আপদে-বিপদে সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে থাকে। জীবনের সুসময়ে পরিবার যেমন পাশে থাকে ঠিক তেমনি কঠিন পরিস্থিতিতেও সবার আগে পাশে এসে দাঁড়ায় পরিবার। আর সেই জন্যই মানুষ কঠিন পরিস্থিতিতেও পরিবারের মুখে আলতো হাসির ছোঁয়া দেখার জন্য সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়।
মানব জীবনের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বড় মানবীয় সংগঠন হলো পরিবার। প্রকৃতির নিয়মে সাধারণত রক্তের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষদেরকে নিয়েই পরিবার গঠিত হয়। তাই কোনো শিশুর জন্মের পর থেকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি থাকে। যার মূল কারণ হলো পরিবারই হলো শিশুটির সর্বপ্রথম এবং সর্ব শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য পারিবারিক কাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যই বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পরিবারের ভূমিকা অসীম।
প্রযুক্তির উন্নতির জন্য আমরা এখন হাতের মুঠোয় গোটা বিশ্বকে পেয়ে গেছি। সেজন্যই আমরা অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছি কোনো উন্নত দেশ কে অনুসরণ করতে। আর এটা করতে গিয়েই আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের আদি শেকড়কে ও পারিবারিক ঐতিহ্য কে। একটি পরিবারকে বিনি সুতোর মালায় বেঁধে রাখার জন্য বড়রা যে কি ভূমিকা পালন করেন তা আমরা ভুলে যাচ্ছি। সেজন্যই হয়তো বর্তমানকালে পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যের সঙ্গে মিলেমিশে একসঙ্গে থাকা যেন রূপকথার গল্পে পরিণত হয়েছে। আজকের যুগের ছেলে মেয়েদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার সৌভাগ্য হয়না।
আধুনিককালে কাজের চাপে মানুষ ক্রমাগত পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। যার দরুন শিথিল হয়ে পড়ছে পারিবারিক বন্ধন। আর সেই জন্যেই পারিবারিক বন্ধনকে মজবুত করতে ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টম্বর রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ ই মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধের দিকে তাকিয়ে পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করতেই শুরু হয় পরিবার দিবস।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যের অধিকার ও মর্যাদা হবে যথাযোগ্য। কারন পরিবারই হলো মানুষের বেঁচে থাকার অক্সিজেন’। আবার হিন্দু ধর্ম মতে পরিবার হল মন্দিরের মতো। যেখানে বাবা-মাকে দেবতার আসনে বসিয়ে পূজা করা হয়। তাই আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসে বিশ্বের প্রতিটি পরিবারের বন্ধন সুদৃঢ় হোক এবং প্রত্যেকটি পরিবার সুখী হোক।