নিউজ ডেস্কঃ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের উপরেও শুল্কের পরিমাণ ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে ওই শুল্কের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত নির্দেশনামায় স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পণ্যের উপর ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নেবে আমেরিকা। এর আগে ৩৭ শতাংশ শুল্কের কথা ঢাকাকে বলা হয়েছিল। তা ১৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আরও কিছুটা শুল্ক হ্রাস প্রত্যাশা করেছিলেন। ঢাকার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে উল্লেখ করে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প যখন প্রথম বার বিভিন্ন দেশের উপর শুল্কের পরিমাণ ঘোষণা করলেন, তখন বাংলাদেশের পণ্য থেকে ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নেওয়ার কথা বলেছিলেন। পরে সেই শুল্ক স্থগিত হয়ে যায়। ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্প জানান, ৩৭ নয়, দুই শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের উপর শুল্কের পরিমাণ করা হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। এর পরেও বাংলাদেশের আধিকারিকেরা হোয়াইট হাউসের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কী করলে শুল্কের পরিমাণ আরও কমানো যায়, তা দেখছিলেন। অবশেষে সেই আলোচনার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের শুল্ক চূড়ান্ত করলেন ট্রাম্প। জানালেন, আমেরিকার বাজারে কোনও পণ্য বিক্রি করতে হলে বাংলাদেশকে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে।
ট্রাম্পের ঘোষণায় প্রত্যাশাপূরণ না হলেও একেবারে হতাশ নয় ঢাকা। বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘‘২০ শতাংশ শুল্কে আমরা প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকব। আমেরিকায় আমাদের রফতানি বাধা পাবে না। তেমন আশঙ্কা নেই। তবে আমরা ২০ শতাংশের নীচে শুল্ক প্রত্যাশা করেছিলাম।’’ বস্তুত, এই ২০ শতাংশ শুল্ক বাড়তি। বর্তমানে বাংলাদেশ গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে আমেরিকায় ব্যবসা করে। ফলে ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক প্রযুক্ত হলে ঢাকাকে মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, আগামী ৭ অগস্ট থেকে এই বর্ধিত শুল্ক কার্যকর করা হবে। এখনও ট্রাম্প প্রশাসন সে বিষয়ে কিছু জানায়নি।
যদিও এই বাণিজ্যচুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়েছেন ইউনূস। বলেছেন, ‘‘শুল্কহার ২০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে আরোপিত শুল্কের চেয়ে তা ১৭ শতাংশ কম। শুল্কহার নিয়ে আলোচনায় আমাদের প্রতিনিধিরা অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে তাঁরা অবিচল থেকেছেন।’’ গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা চলছে, জানিয়েছেন ইউনূস। তাঁর কথায়, ‘‘এই চুক্তি আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেছে। তুলনামূলক সুবিধা ধরে রাখতে পেরেছে।’’ বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির পথ এতে প্রশস্ত হয়েছে বলে ইউনূসের দাবি।
ভারতের উপর প্রথমে ২৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল আমেরিকা। পরে ২৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাকিস্তানের উপর ধার্য করা হয়েছে ১৯ শতাংশ শুল্ক। এ ছাড়া, শ্রীলঙ্কা থেকে ২০ শতাংশ, আফগানিস্তান থেকে ১৫ শতাংশ, ব্রাজ়িল থেকে ১০ শতাংশ, মায়ানমার থেকে ৪০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নেবে আমেরিকা। ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ভারতের উপর জরিমানার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে তিনি রুষ্ট। সেখান থেকে খনিজ তেল এবং অস্ত্র আমদানির কারণে ভারতের উপরে বাড়তি আরও শুল্ক চাপানো হতে পারে।
Leave a Reply