অর্পিতা সিনহা, বাঁকুড়া (৭মে,২০২০): আজ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্ম সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবটি বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমায় মহামানব বুদ্ধদেবের তিনটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। এইদিন বুদ্ধদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন,সিদ্ধি লাভ করেছিলেন এবং মহানির্বাণ লাভ করেছিলেন।বুদ্ধদেবের স্মৃতিকথা দিয়ে ঘেরা এই দিনটিতে বৌদ্ধ ধর্মানুরাগীরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে বুদ্ধদেবের আরাধনায় নিমগ্ন হন।কেবল বৌদ্ধ ধর্মানুরাগীরাই নন হিন্দুরাও বুদ্ধদেবকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসেবে মনে করেন তাই তাঁরাও এই দিনটিকে বৈশাখী পূর্ণিমা হিসাবে পালন করেন।
বুদ্ধদেব বা গৌতম বুদ্ধ বা সিদ্ধার্থ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৫৬৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে।তাঁর পিতা শুদ্ধোদন ছিলেন বর্তমান নেপালের সীমান্তবর্তী রাজ্য কপিলাবস্তুর রাজা। খুব কমবয়সেই সিদ্ধার্থ জীবনের দুঃখের কারণ এবং তা থেকে মুক্তির উপায় অনুসন্ধানের জন্য সমস্ত রকম রাজকীয় ঐশ্বর্য ও সুখ পরিত্যাগ করে কঠোর সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন এবং সিদ্ধিলাভ ও করেছিলেন।তিনি ঈশ্বর বা পয়গম্বর ছিলেন
না,তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ এবং নিজের চেষ্টাতেই তিনি জীবনের চরম সত্যকে উপলব্ধি করেছিলেন।তিনি বলেছিলেন সব কিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করার কথা।বুদ্ধদেবের চিন্তা- ভাবনা মানুষের দুঃখ কেই কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছিল।তিনি মানব জীবনের চরম ও বাস্তব সত্য যে দুঃখ তা উপলব্ধি করেছিলেন তাই নির্বাণ লাভের মাধ্যমে এই বৈশ্বিক দুঃখ নিবারণের জন্য উপদেশ দান করেছিলেন।আমাদের জীবনের নিত্য দিনের পরিচিত এই দুঃখময় জগত থেকে মুক্তি পেতে হলে মোক্ষ লাভ একান্ত প্রয়োজন বলে তিনি মনে করতেন।তাঁর মতে বিশ্বের সব কিছু পরস্পর সম্পর্কিত এবং কিছু একটা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি কর্ম অনুযায়ী ফল লাভের কথা বিশ্বাস করতেন। তিনি এটাও বিশ্বাস করতেন দুঃখ মানুষের নিজের তৈরি তাই কেউ যদি চায় তাহলে নিজের প্রচেষ্টা ও কর্মের দ্বারা তা থেকে মুক্তি পেতে পারে।বৌদ্ধমতে বাসনা বা ইচ্ছা হল সর্ব দুঃখের মূল কারণ। তাই সমস্ত বন্ধন উপেক্ষা করে মুক্তি লাভ করতে হবে অর্থাৎ নির্বাণ লাভ করতে হবে। নির্বাণ লাভের আক্ষরিক অর্থ হলো নিভে যাওয়া,কিন্তু বৌদ্ধমতে সকল দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া।এই সম্বন্ধে বুদ্ধদেব চারটি আর্য সত্য বা চারটি পরামর্শ দান করেছিলেন। বুদ্ধদেবের এই সমস্ত মতবাদ পালি ভাষায় রচিত
ত্রিপিটক গ্রন্থে সংরক্ষিত আছে যা বৌদ্ধ ধর্ম- সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত।
বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীরা তাঁর পূজা সহ নানা রকম মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।এই দিন তাঁরা বিভিন্ন পূজা ও আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নানা রকম সামাজিক ,সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।বৌদ্ধবিহারে এইসময় চলে তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান। এইদিনে টিতে বৌদ্ধবিহারে মেলাও বসে।শুধু আমাদের দেশেই নয় বিভিন্ন দেশে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনটিকে নিষ্ঠার সহিত পালন করা হয়। আবার বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষেরা শিকারে যান এবংতাঁদের বিশ্বাস এই শিকারে দেবতারা তুষ্ট হন।
বর্তমানে আমাদের গোটা বিশ্ব কঠিন অসুখে জর্জরিত।কিন্তু মানুষের স্বপ্ন, আসা, সুখ ,আনন্দ সেগুলো তো থেমে যাইনি আর সময় ও থেমে যায়নি তাই এসে পরছে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব।এই বছর করোনার আতঙ্কের কারণে সমস্ত বৌদ্ধমঠের তরফ থেকে আহ্বান করা হয়েছে যেন ঘরে বসেই আজকের দিনটি উদযাপিত করা হয়।