সঞ্চিতা সিনহা,বাঁকুড়া(২৩ নভেম্বর ২০২০ ) : জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ হল ‘জগৎ + ধাত্রী’। অর্থাৎ যিনি ত্রিভুবনকে ধারণ করে আছেন তিনিই হলেন দেবী জগদ্ধাত্রী। এই দেবী দশভুজার আরেক শক্তির রূপ যার প্রমাণ পাওয়া যায় শ্রী শ্রী চন্ডী তে। শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুযায়ী, দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধের সময় মহিষাসুর নানান ছলনার আশ্রয় নিয়ে ও বিভিন্ন রূপ ধারণ করে মা দুর্গাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। মহিষাসুরের সেই বিভিন্ন রূপের মধ্যে একটি রূপ ছিল হস্তীরূপ। এই হস্তীরূপী মহিষাসুর যখন মা দুর্গাকে বধ করতে উদ্যত তখনই দেবী দুর্গা চতুর্ভূজা মা জগদ্ধাত্রী রূপ ধারণ করে চক্রের আঘাতে হস্তীর শুঁড়টি দেহ থেকে আলাদা করে দেন । সেইজন্যই মূর্তিতত্ত্বে দেবী জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ এক হস্তীর মৃত শরীরের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। আবার সংস্কৃতে হাতির অপর একটি নাম করী, তাই ঐ অসুরটির নাম ছিল করীন্দ্রাসুর। সেইজন্যই দেবী জগদ্ধাত্রী করীন্দ্রাসুরকে বধ করে হন করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।
আবার উপনিষদে তিনিই দেবী উমা হৈমবতী। জগদ্ধাত্রী পুজা বঙ্গদেশে প্রচলিত থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চন্দননগর, গুপ্তিপাড়া ও নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজা জগৎখ্যাত। দেবী জগদ্ধাত্রী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। দেবীর চার হস্তে থাকে শঙ্খ, চক্র ধনুক ও বাণ এবং গলায় বিরাজ করে নাগরাজ। দেবী জগদ্ধাত্রী সত্ত্বগুণের প্রতীক এবং উদিত সূর্যের ন্যায় তার গায়ের রং কমলা। বর্তমানকালে মা দুর্গার সঙ্গে সাদৃশ্য স্থাপনের জন্য দেবীর গায়ের রং করা হয় কাঁচা সোনার রঙে।
কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজত্বকাল থেকেই বঙ্গদেশে জগদ্ধাত্রী পুজা বিখ্যাত হয়ে উঠে। তবে দেবীর পূজা পদ্ধতি বেশ স্বতন্ত্র। সাধারণভাবে দুটি প্রথায় দেবীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ দুর্গাপূজার ধাঁচে সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত জগদ্ধাত্রী পূজা করে থাকেন আবার অনেকেই নবমীর দিনেই একসঙ্গে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পুজা করে থাকেন ।