অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া :- গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমার অন্তর্গত আমতা – জয়পুর থানা স্পোর্টস এ্যাসোসিয়েশনের পরিচালনায় ১৯০৫ সালে স্বদেশী আন্দোলনের সময় জম্ম নেওয়া একশত কুড়ি বৎসরের প্রাচীন রসপুর বীণাপাণি ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় আমতা ১ নং ব্লকের রসপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রসপুর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত হল চূড়ান্ত পর্যায়ের ২১ তম রামকৃষ্ণ মন্ডল স্মৃতি ফুটবল চ্যালেঞ্জ কাপ ‘ ২৫। রামকৃষ্ণ মন্ডল স্মৃতি ফুটবল চ্যালেঞ্জ কাপ প্রসঙ্গে জানার আগে জানতে হবে রামকৃষ্ণ মন্ডল সম্পর্কে।১৯০৮ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমতার কলিকাতা গ্ৰামের প্রসিদ্ধ মন্ডল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রামকৃষ্ণ মন্ডল। তাঁর পিতার নাম তারাপদ মন্ডল এবং মাতার নাম শিবকালী মন্ডল। রামকৃষ্ণ মন্ডল হাওড়ার অক্ষয় শিক্ষায়তন থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। তিনি হাওড়া কোর্টের প্রেসকার ছিলেন।পরে বাসন্তী চালের মিলে ম্যানেজার পদে কাজ করে ছিলেন। তিনি সোমেশ্বর গ্ৰামের স্বাধীনতা সংগ্ৰামী ভোলানাথ মাল এর সঙ্গে আমতা থানা পল্লী উন্নয়ন মঙ্গল সমিতি – র মাধ্যমে আমতা থানার বিভিন্ন গ্ৰামে গ্ৰাম উন্নয়নে নানান সমাজ সেবা মূলক কাজ করে ছিলেন। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৩৪ সালে গঠিত হওয়া আমতা থানা ইন্টার ভিলেজ ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামকৃষ্ণ মন্ডল।১৯৫৬ সালে নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম হয় আমতা থানা স্পোর্টস এ্যাসোসিয়েশন।১৯৯৬ – ৯৭ সালে জয়পুর থানা গঠন হওয়ার পর নামকরণ হয় আমতা – জয়পুর থানা স্পোর্টস এ্যাসোসিয়েশন। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে আমতার ২০ টি গ্ৰামকে নিয়ে গঠিত ইউনিয়ন বোর্ডে ১৯৪০ সাল থেকে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসাবে সুদক্ষ প্রশাসক হিসাবে সম্মানের সহিত বোর্ড পরিচালনা করেছেন।১৯২০ সালে ইংরেজরা বর্ধমান শহরকে বাঁচানোর জন্য মুচিহানা থেকে বেগোর হানা পয়েন্টে মুন্ডেশ্বরীতে বোল্ডার ফেলে দামোদর নদকে সঙ্কুচিত করে দেয়।এর ফলে বিস্তির্ণ অঞ্চলের গ্ৰামের কৃষকরা সমস্যায় পড়ে। স্বাধীনতার প্রাক মূহুর্তে ১৯৪৭ সালের ২৭ জানুয়ারি রামকৃষ্ণ মন্ডল দামোদর নদের তীরবর্তী কৃষকদের সংগঠিত করে দামোদর নদকে প্রসারিত করার জন্য গণপরিষদে ডেপুটেশন দেওয়ার নেতৃত্ব দেন। রামকৃষ্ণ মন্ডল সমাজসেবী ও দক্ষ প্রসাসকই ছিলেন না। তিনি একাধারে লেখক ও ছিলেন। তিনি ‘ দাশুরথি রাম ‘ , ‘ কালাপাহাড় ‘ , ‘ হিন্দুবীর ‘ এই তিনটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। রামকৃষ্ণ মন্ডল এর সমাজসেবা মূলক কাজ ও এলাকা উন্নয়নে গঠন মূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে একটি দু নলা বন্দুক উপহার দেন। সেই বন্দুক টি তাঁর নামাঙ্কিত রসপুর গ্ৰামে ” রামকৃষ্ণ মন্ডল স্মৃতি মিউজিয়াম ” এ সংরক্ষিত আছে।রামকৃষ্ণ মন্ডল কে এলাকাবাসীরা ভয় পেতেন। তিনি কোনো অন্যায় কাজ করেন নি এবং কোনো অন্যায় কাজ কে, অন্যায়কারীকে প্রশয় দেন নি। তাঁকে এলাকাবাসীরা অত্যন্ত সমীহ করতেন।।১৯৬৪ সালের ১০ ডিসেম্বর রামকৃষ্ণ মন্ডল প্রয়াত হন। রামকৃষ্ণ মন্ডল এর স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর সুযোগ্য পুত্র সমাজসেবী তপন মন্ডল সহ রামকৃষ্ণ মন্ডল এর পরিবারবর্গের সদস্য – সদস্যরা ২০ বৎসর ধরে ” রামকৃষ্ণ মন্ডল স্মৃতি চ্যালেঞ্জ কাপ” এর আয়োজন করে চলেছে ধারাবাহিক ভাবে। এই চ্যালেঞ্জ কাপ এর এই বৎসর ২১ তম বর্ষে চূড়ান্ত পর্যায়ের ফুটবল খেলায় ‘ খালনা কালীমাতা ‘ এবং ‘ জয়পুর সাধনা সমিতি ‘ অংশগ্রহণ করে। চূড়ান্ত পর্যায়ের ফুটবল খেলায় ” খালনা কালীমাতা” ২ – ০ গোলে জয়লাভ করে। চূড়ান্ত পর্যায়ের ফুটবল খেলায় উপস্থিত ছিলেন রসপুর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রেমচাঁদ রায়, বিশিষ্ট ফুটবল খেলোয়াড় অমল দত্ত, আমতা – জয়পুর থানা স্পোর্টস এ্যাসোসিয়েশন এর পক্ষে সম্পাদক নিখিল সামন্ত, সুশীল হাজরা, অশোক দাস, রসপুর বীণাপাণি ক্লাবের রাজেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ, সুপ্রভাত নেবু, গুরুদাস সাধুখাঁ, ‘ অগ্ৰগতি যোগ ও ন্যাচারোপ্যাথি কলেজ এর অধ্যক্ষ ডাঃ পরিতোষ হাজরা, অতনু মন্ডল সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। চূড়ান্ত পর্যায়ের ফুটবল খেলায় দুটি দলের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ক্রীড়াশৈলী পুরষ্কার, খেলার পরিচালক ও সহ পরিচালকদের পুরষ্কার, শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় পুরষ্কার,জয়ী দলকে সুদৃশ্য ট্রফি ও নগদ টাকা, পরাজিত দলকে সুদৃশ্য ট্রফি ও নগদ টাকা উপস্থিত বিভিন্ন অতিথিবৃন্দ তুলে দেন। সমগ্ৰ অনুষ্ঠানটি কথার মাধুর্যে সঞ্চলনা করেন সমাজসেবী মুস্তাক আলি মন্ডল।