নিজস্ব সংবাদদাতা , নদীয়া: অন্যের বাড়ি দখল করে বছরের পর বছর থাকার অভিযোগ উঠল এক সমাজসেবীর বিরুদ্ধে। দখল ছাড়ার জন্য জোরাজুরি করলে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এবং প্রাণের মারার হুমকিও দেয় তথাকথিত ঐ সমাজসেবী বলে অভিযোগ। আর তার স্বামী হুমকি দেন তিনি নাকি বিজেপি করেন। শান্তিপুর পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিদাস লেনের ঘটনা।
জানা যায়, শান্তিপুরের বিশিষ্ট সমাজসেবী বলে পরিচিত মোহর দে বিশ্বাস এবং তার স্বামী অঞ্জন বিশ্বাস যে বাড়িতে থাকেন সেটা এক স্কুল শিক্ষকের। যা এতদিন তারা নিজেদের বলেই দাবি করে আসছিলেন বলে অভিযোগ। বহুদিন ধরে তারা এই বাড়িটা দখল করে আছেন। প্রসঙ্গত শান্তিপুরের সাহেব ডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সহদেব বিশ্বাস গত 2012 সালে মিনা চক্রবর্তীর কাছ থেকে এই বাড়িটি কেনেন। কিন্তু সেই সময় তার ছেলে কল্যাণীতে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার সুযোগ পায়।
সে কারণে তারা বাড়িটাতে তালা দিয়ে কল্যাণীতে চলে যায়। বাড়ি ফাঁকাই পড়ে থাকে। সেই সময় সহদেব বাবুর পরিচিত নেপাল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলে যে বাড়িটা যখন ফাঁকা পড়ে আছে, তোমরা যখন এখানে কেউ থাকছো না তাহলে আমার বাড়ি তৈরি করা পর্যন্ত দু বছর আমি তোমাদের বাড়িতেই থাকবো। আমার বাড়ি হয়ে গেলে আমরা তোমার বাড়ি ছেড়ে উঠে যাব। তাই তারা তাকে থাকতে দিয়েছিল।এখন ছেলের পড়া শেষ হয়ে গেলে তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলছেন কিন্তু তারা ছাড়ছেন না। অভিযোগ অঞ্জন বিশ্বাস ওরফে নেপাল বিশ্বাস এবং তার স্ত্রী মোহর দে বিশ্বাস তাদের বাড়িতে ঢুকতে গেলে বাধা দেয়। এমনকি প্রাণে মারার হুমকি এবং পরনের কাপড় ছিঁড়ে থানায় শ্লীলতাহানীর অভিযোগ দায়ের করার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ সহদেব বাবুর।
অঞ্জন বিশ্বাস জানান – প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে আমি এই বাড়িতে আছি। বিগত আট বছর ধরে তিনি বাড়িটাতে ভাড়া দিয়ে রয়েছেন। প্রমাণ হিসাবে থানাতেও ভাড়া দেওয়ার কাগজপত্র তিনি দেখিয়েছেন তার দাবি। পাশাপাশি তার অভিযোগ মাসের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে দিয়েছেন তার ছেলের অ্যাকাউন্টে।
সহদেব বাবু জানান- ২০১৫ সালে আমার বাড়িতে আমি ওকে থাকতে দিয়েছিলাম। ও ৮ বছরের হিসেব কিভাবে দিল। আর আমার ছেলের কাছ থেকে ব্যবসার জন্য নেপাল বিশ্বাস ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। সেই টাকাই সে প্রতি মাসে আড়াই হাজার করে শোধ দিচ্ছে। আর যদি বাড়ির ভাড়া দিতেই হয় তাহলে ছেলের অ্যাকাউন্টে কেন, বাড়ি তো আমার নামে টাকা তো আমাকেই দেওয়া উচিত। বারিতে থাকার বিষয়ে কি ওরা আমার ছেলের কাছে এসেছিলো না আমার কাছে ? পাশাপাশি তাঁর আরও অভিযোগ প্রশাসনের কাছে এব্যাপারে বারংবার অভিযোগ করার পরেও তিনি সুবিচার পাননি। তবে তাঁর আইনের প্রতি আস্থা আছে। তাঁর আশা খুব শীঘ্রই তিনি সুবিচার পাবেন।
শান্তিপুর পৌরসভার প্রশাসক তথা তৃণমূল নেতা অজয় দে জানান- আমার কাছে সহদেব বিশ্বাস এসেছিল। আমি বলেছি তাকে আইনের পথে যেতে। কারণ যদি সে নিয়মানুযায়ী বাড়ি ক্রয় করে থাকে তাহলে কেউ জবরদখল করে দীর্ঘদিন সেটাকে আটকে রাখতে পারে না। তার জন্য আইন আছে ।আইন আইনের পথেই চলুক যেটা আমি চাই। আর আইনের দিক থেকে যদি কোন সাহায্য সহযোগিতা দরকার হয় তাহলে আমার কাছ থেকে সে নিশ্চিতভাবে সহযোগিতা পাবে।
রানাঘাটের দক্ষিণের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার জানান- নেপাল বিশ্বাস তার দলের কেউ নয়। সমর্থক হতেই পারে। তবে আইনের ঊর্ধ্বে কেউই নয়। যদি তার বিরুদ্ধে এরকম কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আমি প্রশাসনকে বলব তার বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।