খাদিমুল ইসলাম,বানারহাট: জঙ্গল সংলগ্ন নাথুয়ার মাঝিয়ালী বস্তি। বস্তি সংলগ্ন নাথুয়া জঙ্গল পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জলঢাকা নদী পার হলেই রামসাই ফরেস্ট। পুজো আসছে । প্রতিবছরের মতো এবছরও মাঝিয়ালি বস্তিতে সাজো-সাজো রব। পুজোর কয়েকটা দিন ভালোমন্দ খাওয়া বাড়িতে বাড়িতে নতুন জামাকাপড় পড়া। তারপর দুপুর গড়াতেই সকলে মিলে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়া। সারাবছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করার পর মায়ের দর্শন পেয়ে ওখানকার দোহাতি মানুষগুলি আবেগে চোখে জল ধরে রাখতে পারে না। আপসোস একটাই, বস্তিবাসী হওয়া । পুজোর সময় গভীর রাত পর্যন্ত যখন চারদিকে আনন্দ উল্লাস চলে। তখন তারা এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকে। একপ্রকার রাতের আনন্দে এখানকার কেউই সামিল হতে পারে না। পথে হাতির ভয়! তারমধ্যে যে কোনো সময় চা বাগান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে লেপার্ড। তাইত, সূর্যি ঢলার আগেই ঠাকুর দেখা সাড়া করে তারা ঘরে ফেরে। ঘরে ফেরে মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা করে, সারাবছর যেন বন্য জন্তুর আক্রমণ থেকে তাদের রক্ষা হয়। শুধু এরাই নয়। বন্য জন্তুর ভয়ে দিনের আলোতে মায়ের দর্শন সেড়ে ঘরে ফিরতে হয় নাথুয়ার নিউদিঘা, ধুমপাড়া, খয়েরকাটা সহ বিস্তৃর্ণ জঙ্গল এলাকার বাসিন্দাদের। আশেপাশে এক দুটি ক্লাবের উদ্যোগে দুর্গাপুজো হলেও সন্ধ্যার পর সেখানেও শুনসান হয়ে যায়। আওয়াজ আর আলো দেখে জঙ্গল থেকে যে হাতির দল ছুটে এসেছে তার ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে এলাকার মধ্যে। এবছর নাথুয়া বাজারে বেশ কয়েকটি ক্লাবের উদ্যোগে বিগ বাজেটের পুজো হবে। তার মধ্যে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম আশ্রমপাড়া দুর্গা উৎসব কমিটির তরফে মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরের আদলে পূজোর থিম তৈরি করার কাজ চলছে। আলোর রঙে রঙিন হবে নাথুয়া বাজার। মাঝিয়ালী বস্তিতে আনন্দের ঢেউ। প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি পেরানো টুবাই মুন্ডা, রভিন মূর্মর মুখে চওড়া হাসি। তারা জানালেন, সামনের হাটে তারা নতুন জামাকাপড় কিনতে যাবে। তারপর মায়ের হাত ধরে নাথোয়া বাজারে ঠাকুর দেখতে যাবে। এলাকার বাসিন্দা মালতি রাভা, ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, জঙ্গল লাগোয়া আমাদের বস্তি। রাতের বেলায় যেকোনো সময়ে বেরিয়ে আসে বন্য জন্তু। ভয়, বেশি হাতি আর লেপার্ডের। তাই আমরা কেউ রিক্স নেই না। একেই কথা জানালেন নাথুয়ার তৃণমূল নেতা কবির হোসেন।