অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া :- রাজ্যে দুর্ঘটনাগ্ৰস্ত মুমুর্ষ রোগী ও অন্যান্য রোগী, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য রক্তের যে পরিমাণ চাহিদা, সেই পরিমাণ রক্তের যোগানের ঘাটতি থাকে। ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলিতে রক্তের ঘাটতি থাকে। সেই ঘাটতি মেটানোর জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন,ক্লাব-প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন পূজা কমিটি, বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে থাকে।গ্ৰীষ্ণকালীন সময়ে এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত রাজ্যের ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলিতে রক্তের ঘাটতি সমস্যা চরম পর্যায়ে পৌঁচ্ছায়। এই বৎসর রাজ্যের ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলিতে বিগত কয়েক মাস যাব্ৎ রক্তের ঘাটতি সমস্যা প্রকট হয়েছে।এই বৎসর গ্ৰীষ্ণকালীন সমস্যার পাশাপাশি দেশ ব্যাপী নির্বাচনী উৎসব থাকায় বিগত কয়েক মাস যাবৎ রক্তদানের শিবিরের সংখ্যা অত্যন্ত কম হয়েছে। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা। সরকারি – অসরকারীভাবে যথেচ্ছভাবে গাছ কাটা হচ্ছে। যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে তার সিকি ভাগ ও গাছ বসানো হচ্ছে না। পুকুর – ডোবা,খাল- বিল, বুজিয়ে কারখানা, বাড়ি,প্রোমোটিং এর ব্যবসা করা হচ্ছে। প্রশাসন নির্বিকার। সরকারিভাবে গাছ কেটে কারখানা,রাস্তা তৈরি হচ্ছে। সরকারিভাবে যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে সেই পরিমাণ গাছ বসানো হচ্ছে না। দিনের পর দিন বাড়ি, কলকারখানার সংখ্যা বাড়ছে। দিনের পর দিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে।যে কারনে পরিবেশ আজ দূষিত হচ্ছে। প্রকৃতি তার স্বাভাবিক ভারসাম্য হারাচ্ছে। মানুষ দিনের পর দিন নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । এই দুটি সমস্যাকে সামনে রেখে গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমার বাগনান ‘ সুফিজিম মাদারিয়া অর্গানাইজেশন ‘ এর শাখা সংগঠন আমতা ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির গাজীপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গাজীপুর ‘ সুফিজিম মাদারিয়া অর্গানাইজেশন ‘ তিনদিন ব্যাপী রক্তদান উৎসব, বৃক্ষরোপণ উৎসব, ক্রীড়া – সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।ক্রীড়ানুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার ডালিতে ছিল অঙ্ক দৌড়, হাতের লেখা, স্মৃতি দৌড়,আলু দৌড়, বিস্কুট দৌড়, গুলি চামচ দৌড়, মিউজিক্যাল চেয়ার, হাঁড়ি ভাঙা,বাতি প্রজ্জ্বলন,যেমন খুশি সাজো, মিউজিক্যাল বল পাসিং,গোলে বল মারা, উইকেটে বল ছোঁড়া, বসে আঁকো, ক্যুইজ, আবৃত্তি। ছিল একক সংগীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, বাউল সংগীত। সমস্ত প্রতিযোগিতার সফল প্রতিযোগীদের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। রক্তদান উৎসব ও বৃক্ষরোপণ উৎসবে উপস্থিত থেকে বাগনান ‘ সুফিজিম মাদারিয়া অর্গানাইজেশন ‘ এর সম্পাদক ডাঃ সৈয়দ হাফিজুর রহমান তয়ফুরী সংগঠনের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, এবং আজকের এই উৎসব প্রসঙ্গে বলেন, ” সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) । তিনি যে শুধু ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন,তা কিন্তু নয়। তিনি মানবজাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে ও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। সকল অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সফল আন্দোলনকারী। তাঁর জীবনের প্রতিটি কাজ মানবজাতির জন্য পথ প্রদর্শক ও আদর্শ শিক্ষক হিসেবে সর্বজন সমাদৃত। মহানবী (সা.) এর জীবনের তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে যা আজ ও মানবজাতিকে শান্তির পথ দেখিয়ে আসছে।যার নাম হচ্ছে ‘ হিলফুল ফুজুল ‘ ।এর অর্থ ‘ শান্তি সংঘ ‘ । নবয়ুত প্রাপ্তির পনেরো বছর আগে,মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী (সা.) এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছিলেন। তিনি আরব সমাজের সব অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে তাঁর সমবয়সী কিছু যুবকদের নিয়ে এই ‘ শান্তি সংঘ ‘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।এ সংঘের প্রতিটি কর্মসূচি থেকে যুব সমাজের জন্য বহু শিক্ষনীয় বিষয় আছে। ‘ হিলফুল শেষ শ্রদ্ধা আর বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের এখন বিচরণ মহাকাশে। কিন্তু আজ ও মানুষের জীবনে শান্তি নেই। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ,গুম,খুন, ছিনতাই জন জীবনকে করে তুলেছে অস্থির।জবর দখল, জালিয়াতি, দূর্ণীতি,নারী নির্যাতন,শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ , শ্রমিকের পাওয়া অনাদর, আত্মসাৎ, মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড এখন নিত্যদিনের খবর ” হাফিজুর রহমান তয়ফুরী আর বলেন,” পাশ্চাত্যের নোংরামি ও অপসংস্কৃতির সয়লাবে ভেসে যাচ্ছে আজকের যুব সমাজ। যাদের হাত ধরে সমাজের অন্যায়, অস্থিরতা দূর হওয়ার কথা,তারাই আজ জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ, কর্মকাণ্ডে।তাই যুবকদের ফিরে আসতে হবে রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর আদর্শের প্রতি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘ হিলফুল ফুজুল ‘ -র আলোকে যুব সমাজ গঠনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে ” । তিনি বলেন, ” আমরা সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকি। মানুষের সুখে – দুঃখে তাদের পাশে থেকে সমস্যা -সমাধানে যথাসাধ্য সাহায্য -সহযোগিতা করে থাকি ” । তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন, ” গাজীপুর ‘ সুফিজিম মাদারিয়া অর্গানাইজেশন ‘ সংগঠন সংলগ্ন খেলার মাঠের উন্নতি, এলাকার রাস্তার সংস্কার এর জন্য প্রশাসনিক দফতরে বারংবার আবেদন – নিবেদন করলে ও শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি মেলে, সমস্যা যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেছে ” । স্বাস্থ্যের অব্যবস্থা প্রসঙ্গ টেনে বলেন , ” অমরাগড়ি, জয়পুর, উদয়নারায়ণপুর, আমতা,বাগনান হাসপাতাল গুলিতে রোগী নিয়ে গেলেই সামান্য প্রাথমিক চিকিৎসা না করেই রোগীকে অন্যত্র অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয় ” । গাজীপুর ‘ সুফিজিম মাদারিয়া অর্গানাইজেশন ‘ র ক্রীড়া সম্পাদক পল্টু মল্লিক বলেন, ‘ হিলফুল ফুজুল ‘ – র আলোকে যুব সমাজ গঠনে নিজেদের আত্মনিয়োগে ‘ সুফিজিম মাদারিয়া অর্গানাইজেশন ‘ আজকে সেই পথেই এগিয়ে চলেছে। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিগত দেড়শত বৎসর ধরে ‘ সুফিজিম ‘ এর আমাদের পূর্বতন গুরুদেব (পীর) ডাঃ কাদের বক্স শাহ, আফতাব উদ্দিন শাহ ও বর্তমানে ডাঃ সৈয়দ হাফিজুর রহমান তয়ফুরী উনি আমাদের মতো সমাজের বেশ কিছু লোক নিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দেখানো পথেই এগিয়ে চলেছে। পল্টু মল্লিক দুঃখের সঙ্গে বলেন,” এই এলাকায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল প্রকল্প চালু হলে ও মুসলিম পাড়া,হাটতলা, হাট পুকুর পাড় এলাকার বাসিন্দারা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই কোনো এক অদৃশ্য কারণে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল প্রকল্পের পানীয় জল পাচ্ছে না। প্রশাসনিক দফতরে সমস্যা সমাধানে বারংবার আবেদন জানালেও কোনো সুরাহা মেলেনি। রাস্তার পরিস্থিতি সংকটময়।রাস্তা সংস্কারের জন্য ও বারংবার আবেদন জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি। এই এলাকায় যে খেলার মাঠ টি আছে ‘ সুফিজিম মাদারিয়া অর্গানাইজেশন ‘ সংগঠন সংলগ্ন সেই মাঠ টি গ্ৰামীণ পাকা সড়ক পথের অনেক নীচে।ঐ মাঠ টি মাটি ফেলে উঁচু করার জন্য প্রশাসনিক দফতরে বারংবার আবেদন জানালেও মাঠ টি উঁচু করার শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি মেলে। কিন্তু মাঠ টি তে এক কোদাল মাটি ও পড়ে নি। সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠটিতে জল জমে যায়।তাতে খেলাধুলা করা যায় না।এর পাশাপাশি কোনো অনুষ্ঠান করা যায় না। পল্টু জানালেন, ” আমাদের সংগঠনের কর্মসূচি হল দাতব্য চিকিৎসালয়, রক্তদান উৎসব,বস্ত্র উপহার, চক্ষু পরীক্ষা শিবির ও ছানি অপারেশন, থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয় শিবির, খাৎনা ক্যাম্প, কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার, ফ্রি কোচিং সেন্টার। আগামী দিনে আমাদের পরিকল্পনা গ্ৰন্থাগার নির্মাণ ও বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ ” । মানুষকে বিশুদ্ধ বাতাস দেওয়ার জন্য ও সুস্থ রাখার জন্য সারা বৎসর ব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে প্রতিকী দেড়শত গাছ রোপণ অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন বাগনান ‘ সুফিজিম মাদারিয়া অর্গানাইজেশন ‘ -র সম্পাদক ডাঃ সৈয়দ হাফিজুর রহমান তয়ফুরী। এই সংগঠনের সদস্য -সদস্যারা এলাকার মানুষকে এই বার্তা ‘ আপনি আপনার বাড়িতে এ সি লাগাতেই পারেন।এটা আপনাকে সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। আপনি যদি একটি গাছ রোপণ করেন, তাহলে আপনি আপনার পরিবারের সদস্যরা, আপনার সমাজের সমস্ত মানুষ সারা জীবন বিশুদ্ধ নির্মল বাতাস পাবে। সকল মানুষ সুস্থ সবল,নিরোগ থাকবে। আপনারা প্রত্যেকেই আপনার নিজের জায়গায় অন্তত একটি করে বৃক্ষ রোপন করুন।আর যদি আপনার নিজস্ব কোনো জায়গা না থাকে, তাহলে গ্ৰামীণ রাস্তার ধারে,মূল সড়ক পথের ধারে,পতিত জমিতে গাছ রোপণ করুন এবং তাকে পরিচর্যা করে বড় করে তুলুন। এতে আপনি যেমন বিশুদ্ধ নির্মল বাতাস পাবেন তেমনি সমাজের প্রত্যেকে বিশুদ্ধ নির্মল বাতাস গ্ৰহণ করে সুস্থভাবে জীবন যাপন করবে। নানান দুরারোগ্য ব্যাধির কবলের শিকার হবে না। গ্ৰীষ্ণের প্রচন্ড দাবদাহ ও প্রখর রৌদ্রের তেজকে উপেক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য ফুলেশ্বর ‘ সঞ্জীবন হাসপাতাল ‘ – র চিকিৎসকদের সহযোগিতায় পনেরো জন মহিলা সহ পঞ্চাশ জন রক্তদান আন্দোলনের সৈনিক মানবিকতার পরিচয় দিয়ে রক্তদান করেন। বৃক্ষ রোপন উৎসব ও রক্তদান উৎসব এই দুইটি মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দনা চোংদার, সমাজসেবী তাপস বাকুলী সহ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সমাজসেবী, বৃক্ষপ্রেমী যিনি মাত্র পাঁচ বছরে একলক্ষ চুয়াত্তর হাজার বৃক্ষ রোপন করেছেন এবং এই বৃক্ষরোপণ উৎসব ও রক্তদান উৎসবে দুইশত পঞ্চাশটি গাছ দান করেছেন সেই ব্যক্তিত্ব সৌরভ মন্ডল কে বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।সৌরভ মন্ডল এর দান করা বৃক্ষ রক্তদান উৎসবে পঞ্চাশ জন রক্তদান সৌনিকদের হাতে একটা করে তুলে দেওয়া হয়। বাকি গাছ গুলি গাজীপুর কবর স্থান সহ গাজীপুর গ্ৰামের গ্ৰামীণ রাস্তায়, সড়ক পথের ধারে,পতিত জমিতে রোপণ করা হয়।