হীরক মুখোপাধ্যায়,কোলকাতা : দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যসামগ্রীর পরিবর্তে ‘বাংলার ডেয়ারি’-র ৩০২ নম্বর বিক্রয় কেন্দ্র থেকে এখন বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিক নির্মিত মলমূত্র ত্যাগের পাত্র সহ শবাচ্ছাদনের প্লাস্টিক সিট।
শুধুমাত্র প্রশাসনিক নজরদারির অভাব তথা স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগ-এর ছত্রছায়ায় চলা ‘বাংলার ডেয়ারি’।
হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়ার জন্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ যদি আগামীকাল সকালেই উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসাতে অবস্থিত বারাসাত জেলা হাসপাতাল অধুনা বারাসাত গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ চত্ত্বর আচমকা পরিদর্শনে আসেন তাহলে নিজেই সবকিছু বুঝতে পারবেন।
‘বারাসাত জেলা হাসপাতাল’ বা ‘বারাসাত গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ’-এর প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে ন্যায্য মূল্যের ঔষধের দোকানকে বাম দিকে রেখে ডান দিকের রাস্তা ধরে ‘ব্লাড সেন্টার’-এর দিকে ক’পা হাঁটলেই তিনি চোখের সামনে তাঁর দপ্তরের বিভাগীয় আধিকারিকদের দিবানিদ্রাজনিত আলস্য তথা সার্বিক অপদার্থতার নমুনা দেখতে পাবেন।
জেনে রাখা ভালো, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগ-এর ছত্রছায়ায় ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর, ২০১৩ সালের কোম্পানী আইন অনুসারে তৈরি হয়েছিল ‘বাংলার ডেয়ারি’।
সংস্থা নির্মাণের সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে প্রচার করা হয়েছিল ‘পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ ক্ষেত্রে দুগ্ধজাত শিল্পের সাথে জড়িত কৃষক ও অন্যান্য কর্মীদের সহায়তা করার লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে ‘বাংলার ডেয়ারি’।’
অপরদিকে প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছিল, ‘দুগ্ধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে কাঁচা দুধ কিনে স্বল্প মূল্যে গুণমান সম্পন্ন হরেক খাদ্য সামগ্রী নির্মাণ করবে ‘বাংলার ডেয়ারি’।’
অথচ ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাসে উত্তর ২৪ পরগণার জেলা সদর বারাসাতে অবস্থিত ‘বারাসাত জেলা হাসপাতাল’ বা বারাসাত গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ চত্ত্বরে অবস্থিত ‘বাংলার ডেয়ারি’-র ৩০২ নম্বর বিক্রয় কেন্দ্রের উপর দুধ, মিষ্টি দই, টক দই, ঘোল, পনির, ঘি ও সকল প্রকার আইসক্রিম, জল, প্যাঁড়া বিক্রির কথা ঘোষণা করা থাকলেও ওই বিক্রয় কেন্দ্র থেকে এখন আর ‘বাংলার ডেয়ারি’ নির্মিত কোনো দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্যই আর বিক্রি হয় না।
পরিবর্তে বিক্রি হয় ঝাঁটা, নাইলনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের শিট, বালতি, গামলা থেকে শুরু করে মলমূত্র ত্যাগের পাত্র-র মতো হরেক সামগ্রী, এমনকি গামছা, বেডশিট ইত্যাদি বিবিধ সামগ্রী সহযোগে মুদিখানার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনেক নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী।
দুধ ও দুগ্ধজাত হরেক সামগ্রীর পরিবর্তে কেনো মুদিখানার সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দোকান থেকে পরিস্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, “আমরা কর্মচারী, ওসব কথা মালিক বলতে পারবেন।”
‘বাংলার ডেয়ারি’-র ৩০২ নম্বর কাউন্টার থেকে যখন এইরকম উত্তর পাওয়া গেছে ঠিক তখন বারাসাত স্বাস্থ্য জেলার জনৈক পদস্থ আধিকারিক নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে জানিয়েছেন, “খোঁজ নিয়ে দেখুন ওই দোকান থেকে অনেক সময় শববাহী খাট ও শবাচ্ছাদনেরও যোগান দেওয়া হয়।”